টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ‘উপেন্দ্র সরোবর’ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ধলেশ্বরী বিধৌত নদীবেষ্ঠিত নাগরপুর উপজেলার কাঠুরি শিব মন্দিরের পাশে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন উপেন্দ্র সরোবর। কিš‘ যথাযথ সংস্কার ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সরোবরটি ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আটিয়া পরগনার উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য উপেন্দ্র সরোবর স্থানীয়দের কাছে ‘বার ঘাটলা দীঘি’ নামে পরিচিত। দীর্ঘ ৮৮ বছর আগে ১৩৪১ সালে(মতান্তরে ১৩৬৮ সাল) নাগরপুরের তৎকালীল জমিদার রায় বাহাদুর সতীশ চৌধুরী তার পিতা উপেন্দ্র মোহন রায় চৌধুরীর নামানুসারে ১১ একর জমির উপর এ সরোবর খনন করেছিলেন।
উপেন্দ্র সরোবরের চারপাশজুড়ে ১২টি সুপ্রশস্ত ঘাটলা রয়েছে। সরোবরের তলায় রয়েছে ৬টি সুগভীর কূপ বাকুয়া। স্ব”ছ পানি নিশ্চিত করার জন্য এ কূপগুলো খনন করা হয়েছে। চারপাশের খেজুরসহ অন্যান্য সবুজ গাছ-গাছালী রয়েছে, দিনের অধিকাংশ সময় হরেক রকম পাখির মিষ্টি ডাক- কিঁচিরমিচিঁর লেগেই আছে। দীঘির স্ব”ছ পানি রু²-কঠিন মনকেও বিমোহিত করবেই। কথিত আছে, এক জোৎ¯œাা রাতে জমিদার রায় বাহাদুর চৌধুরী তাঁর সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে নিজের বৈঠকখানায় জোৎ¯œা দেখছিলেন। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন রাতের আধাঁরে তার এলাকার কিছু
মানুষ দূরে বিল থেকে পানি নি”েছ। পরে তিনি খবর নিয়ে জানতে পারলেন যে, তার এলাকার প্রজারা সুপেয় পানির কষ্টে রাতে পানি সংগ্রহ করেন। এ ঘটনায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত ও মর্মাহত হয়ে এই সরোবরটি খনন করার উদ্যোগ নেন এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তা বাস্তবায়ন করেন। তাঁর প্রজাদের সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য সরোবরে ১২টি ঘাটলা এবং ৬টি কূপ(ইদারা) খনন করেন। সৌখিন মৎস্য শিকারিদের জন্য দীঘিতে মাছ চাষও শুরু করেন।
সরোবরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চারপাশে সুদৃশ্য খেজুর গাছ লাগান।
নাগরপুর উপজেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান এ উপেন্দ্র সরোবর। ভ্রমণপিপাসু ও মৎস্য শিকারীদের জন্য বিনোদনের ব্যব¯’া রয়েছে। উপেন্দ্র সরোবরের প্রধান প্রবেশপথ উপেন্দ্র সরোবরের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। উপেন্দ্র সরোবরের চারদিকে ঘুরলে প্রকৃতির অপরূপ শোভায় মন ভরে যায়।
সরোবরের পশ্চিম পাশে প্রধান ঘাট সংলগ্ন মাথায় বিশাল বটবৃক্ষ। এ গাছের বিস্তীর্ণ ছায়া আর শীতল বাতাস গ্রীস্মকালে ভ্রমণ পিপাসু ও ¯’ানীয়দের হৃদয় জুড়িয়ে দেয়। সরোবরটির উত্তর পাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি বৃক্ষরাজি। এসব বৃক্ষরাজির নিচে দাঁড়ালে এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়। মনোমুগ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিটি পার্বণে বিভিন্ন ¯’ানে থেকে আগত দর্শনার্থীরা ভিড় করেন উপেন্দ্র সরোবরে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে এখানে এক সময় পর্যটকরা আসতেন। পিকনিক স্পট হিসেবে দেশজুড়ে এর সুখ্যাতি ছিল। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সৌখিন মাছ শিকারিরা মাছ শিকার করতে আসতেন। প্রায় দিনই বিকালে সরোবরে জমে উঠতো তরুণ- তরুণীদের আড্ডা। কালের বিবর্তনে সংস্কার ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহ্যবাহী উপেন্দ্র সরোবরটি সৌন্দর্য ও জৌলুস হারাতে বসেছে। মুছে যা”েছ জমিদারদের স্মৃতিচিহ্ন।
সরোবরটির উত্তর-দক্ষিণ পাড়ে মাঝে মাঝে মাটির বাঁধ ভেঙে দীঘিপাড় সরু হয়েছে। ২-৩টি ঘাট ভেঙে দীঘিতে পড়ে যা”েছ। অধিকাংশ ঘাট ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী দীঘিটি রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে।
নাগরপুরের ঐতিহ্যবাহী উপেন্দ্র সরোবর শহরের চার দেয়ালের গন্ডি আর যান্ত্রিক একঘেয়েমি ব্যস্ততামুখর জীবন থেকে প্রশান্তির জন্য বেড়িয়ে আসা যায় সহজেই। ঢাকা ও টাঙ্গাইল এই দুই জেলা থেকে খুব সহজেই উপেন্দ্র সরোবরে যাওয়া যায়। ঢাকার মহাখালী থেকে বাসযোগে সরাসরি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে আসা যায়। ঢাকার গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বাসযোগে সাটুরিয়া পর্যন্ত এসে সেখান থেকে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার বা সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে পাটুরিয়া, এরপর সেখান থেকে রিকশা নিয়ে এলেই উপেন্দ্র সরোবর বা বার ঘাটলা দীঘি। পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে উপেন্দ্র সরোবরে যে কেউ বেড়াতে আসতে পারে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।